অরিত্র চ্যাটার্জি

ডিসেম্বর নিয়ে

অরিত্র চ্যাটার্জি




ডিসেম্বর নিয়ে এক কবির কবিতা খুব ভালো লেগেছিল
এখন ভরা ফেব্রুয়ারিতে আবার তাকে প্রয়োজন আমার।
মনে আছে ডিসেম্বর – অনিবার্য ফিরতিপথের মাস
প্রত্যেক ডিসেম্বরে আমার জীবনে কিছু বিপুল সম্ভাবনা দেখা দেয়
আর নিটোল গণিত মেনে কীভাবে বছরভর তার অবচয়
ঘটে, তা এখন আমি জানি। জানি দেরি হয়ে যায় অথচ পুরনো
মানুষ মানুষীদের কথা লিখে রাখতে এখনো ভালো লাগে আমার।

খুব পছন্দের একটা কিছু, এবং এখন তার শেষ
অবশ্যম্ভাবী জেনেও আবার নতুন করে শুরু করার মতো
এটা ভীষণ ব্যক্তিগত একটা খেলা। এই খেলা, খেলার পরিণতি
ও তাকে লিখে রাখতে পারার সম্ভাবনাটুকু ভালো লাগে আমার।
এখন ফেব্রুয়ারি, দেখতে পাই কীভাবে মোহান্তির ছেলে
সোনালি বকলশ হাতে বশ মানায় তার পালিত কুকুরদের
সারা সকাল। এবং সারা সকাল অনচ্ছ মেরুন পর্দা সরিয়ে
পৃথিবীকে দেখতে দেখতে হঠাৎ কোথাও ফোনের বেজে ওঠা।
এবং রঙ নাম্বার। হলে আবারও বুঝতে পারি এখন ফেব্রুয়ারি
তার যাবতীয় সম্ভাবনা সমেত খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছে কোথাও।
এবং বসন্ত, আজও তুমি রয়েছ দূরে- ক্রমশ বলয়িত পথে
তোমার ও আমার মধ্যে যা কিছু সুকৌশলে চাপা পড়ে যায় –
যেমন উত্তর কোলকাতার অলিগলিতে একটি গোপন বাঁক,
একদা বিকেলে শুষে নেওয়া দারুণ সংবিগ্ন ঠোঁট, এবং
তার সংলগ্ন শাদা হয়ে আসা কিছু সিগারেটের ছাই – তুমি জানো
ভালোবাসার পরিবর্তে এসব কিছুই সাদরে গ্রহণ করেছি আমি



ভারী দেওয়ালে একটি জলের রেখা



ভারী দেওয়ালে একটি জলের রেখা
নিউটন মেনে সে ও বা আর কতদূর যাবে
কতদূর অথবা কোথায়
মাথার ভেতরে, এখানে নয় অন্য কোনোখানে
একদিন জন্ম হয়েছিল, এমনটা মনে আছে তার
তারপর অনেকটা অস্পষ্ট, কুয়াশায় ও মেঘে
কেটেছে অনেককাল, যেমন কেটে যায় সময়
যেমন হয়ে যায় ভুল; আবারও এবং অবশ্যম্ভাবী
এখন তার পরিণতিটুকু ধরে রাখবে বলে
জানলার ধারে কেউ রেখে গেছে খালি গেলাস
আর কেউ নেই এই দৃশ্যের ভেতর এখন
শুধু একটি গেলাস ও তার অসমাপ্ত অপেক্ষার ছাপ
ধীরে ধীরে এসে জমা হয় মানুষের মুখে
অনেক মদের কাছাকাছি অনেক ঠোঁটের কাছাকাছি
সেইসব অপেক্ষার কথা, অপেক্ষার ভেতরে অনেক শব্দ
অনেকরঙা শরীরের ঘ্রাণ আর ভুলে ভুলে ভরা সম্ভাবনা
মনে পড়ে প্রথম দশক, ভালোবাসাবাসি হয়েছিল খুব
দ্বিতীয়তে সামান্য স্তিমিত, তখনো হাসির ভেতর
প্রচ্ছন্ন দুঃখের টান, তৃতীয়ে খুব বেশি সংঘর্ষ, র‍্যাশ ড্রাইভ
ব্রেকের আওয়াজ, ঝড়ে জলে অস্পষ্ট একটা বাড়ি থেকে
আরও অস্পষ্ট একটা লোক আবারও রাস্তায় নেমে দাঁড়ায়
এসবের মধ্যে কোনো ঠিক ভুল নেই- আমি তো জানি
আসলেই মাটি থেকে আরেকটু ওপরে উঠে মানুষ
কীভাবে আরও অনেকখানি ওপরের চাঁদ দেখতে চায়
পৃথিবীর বিভিন্ন আকাশে, বিভিন্ন উচ্চতায় আজও একইরকম চাঁদ
এবং তাকে আরও কাছ থেকে দেখতে চাওয়ার একই বাসনা
আমি যে অনেক দূর থেকে এসেছি, এর মধ্যে তার ইঙ্গিত রয়েছে


পাঠকের মতামতঃ